কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

প্রতিটি মানুষের অতি পরিচিত একটি ফল হচ্ছে কমলা। আজকে আমরা আলোচনা করব এ কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আমরা সকলেই জানি । কমলাতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন রয়েছে। কিন্তু আমাদের কমলার খোসা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। তাই আপনাদের জানা প্রয়োজন কমলা খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।

কমলার-খোসার-উপকারিতা-ও-অপকারিতা

কমলা তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। কামলাতে যেমন প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে তেমনি কমলার খোসাতে অনেক ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। এই কমলার খোসা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায় তাই আজকে আপনাদেরকে আমরা জানাবো কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা। চলুন জেনে নেয়া যাক কমলা খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা।

পেজ সূচিপত্রঃ কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

আমাদের দেশে শীতের সময় ব্যাপকভাবে কমলালেবুর আগমন ঘটে। পৃথিবীর সর্বত্রই সকল বাজারেই প্রচুর ভাবে কমলা লেবু আমদানি হয়। শীতের এই কয়টা মাস অনেক অনেক লেবু খাওয়ার সময়। প্রতিদিন আপনার ডায়েটের তালিকায় এই লেবু অবশ্যই রাখা উচিত। শুধু এই শুধু এই কমলালেবুই না এর খোসাতেও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা

শীত আসা মানেই আমাদের শরীরের ত্বক টানটান হয়ে যায়। অনেক অনেক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পরেও তার শুষ্কতা শেষ হয় না নিষ্প্রাণ ত্বকের জন্য কমলালেবুর উপকারিতা অনেক। শুধু যে কমলা লেবু উপকারী তা নয় কমলালেবুর খোসার ও অনেক গুণ রয়েছে। এটি শুধু মুখেই নয় চুলেও ব্যবহার করা যায়। কমলার খোসা ফেলে দিবেন না ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করুন। চলুন কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো আমরা জেনে নিই

কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলার খোসাতে প্রচুর পরিমাণে এন্টি-মাইক্রোবিয়াল আন্টি-ইনফ্লেমেনটরি এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে যা আমাদের মুখে হওয়া ব্রণের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং তৈলাক্ত মুক্ত রাখে। গোটা কমলার খোসা এক কাপ জলে সিদ্ধ করে নিয়ে আমরা সেই জল দিয়ে মুখ ধুতে পারি এটাতে অনেক উপকারিতা রয়েছে।

এইভাবে যদি ব্যবহার করি তাহলে ত্বক মসলিন নরম ও তুলতুলে করে তুলবে। আমাদের ত্বকে ব্যবহারের জন্য কমলার খোসার কোন বিকল্প নেই।ত্বকে তেলের ভারসামও বজায় রাখতে এবং ত্বক মসৃণ নরম করে রাখতে কমলালেবুর খোসার কোন বিকল্প নেই তবে কমলার খোসা সরাসরি আমাদের ত্বকের ব্যবহার করা যাবে না এর ব্যবহার করার কিছু প্রয়োগ বিধি আছে।

এ বিধির বাহিরে কাজ করলে এর বিপরীত হতে পারে ত্বকের জন্য তাজা কমলার খোসার সঙ্গে মসুরের ডাল আমরা ব্যবহার করতে পারি সর্বপ্রথম ত্বকের ব্যবহারের জন্য কমলার খোসার সাথে মসুরের ডাল বেটে নিতে হবে বেটে মিশ্রণটি ত্বকে লাগাতে হবে এতে ত্বক মসৃণ হবেই হবে মুখের দাগ ও দূর হবে ইনশাআল্লাহ 

আমাদের ত্বক টানটান করে তুলবে এবং উজ্জ্বল হবে। এ কমলালেবু দুই টেবিল চামচ কমলার খোসা গুড়ো করে নিয়ে কয়েক ফোটা লেবুর রস এবং টেবিল চামচ চন্দন গুড়া মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগাতে হবে। মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখার তিরিশ মিনিট পর ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে এটা যদি আপনি মাসে ৩-৪ বার ব্যবহর করলে ভালো ফল পাবেন

বাহির রোদের তাপে ঘোরাফেরার কারণে আমাদের ত্বক অনেক সময় পুড়ে যায় কমলার খোসা হলুদ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানালে সেটা ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের পোড়া ভাব দূর হবে এক টেবিল চামচ কমলার গুঁড়ো এক টেবিল চামচ হলুদ এক টেবিল চামচ মধুর মিশ এবং গলায় লাগাতে হবে তারপর দশ মিনিট রাখার পর রোজ ওয়াটার বা সাধারণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন যদি আপনার এলার্জি থাকে তাহলে এই প্যাক লাগাবেন না।

বাহিরে ঘোরাফেরার কারণে আমাদের ত্বকের প্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। এই শুষ্কতা থেকে বাঁচার জন্য কমলার খোসা এবং টক দই ব্যবহার করা যেতে পারে টক দই এক টেবিল চামচ নিয়ে কমলার খোসার গুড়র সঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগালে অনেক উপকার পাবেন এটা ২০ মিনিট পরে সাধারণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারেন 

কমলার খোসা প্রাকৃতিকভাবে টোনার হিসেবে কাজ করে কিভাবে এটি ব্যবহার করতে হয় তা তো আপনাদেরকে বললাম এভাবে যদি আপনারা ব্যবহার করেন গুড়ো করে তাহলে আপনারা আপনাদের প্রাকৃতিকভাবে স্কিনের টোন দেখতে পাবেন। 

কমলার খোসা গুঁড়ো করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে ধুয়ে রোদের শুকিয়ে গুড়ো করতে হবে তারপর এটি আপনার আমি যেভাবে বললাম সেভাবে ব্যবহার করতে পারেন।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কমলার খোসার ব্যবহার 

কমলার খোসা ডায়াবেটিস রোগীরা ব্যবহার করতে পারেন এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই কার্যকরী। যারা ডায়াবেটিস রোগী আছে আপনারা এ কমলার খোসা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে খেতে পারেন এতে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা ডায়াবেটিস রোগের জন্য অনেক উপকারী রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখে।

ডায়াবেটিস-রোগীদের-জন্য-কমলার-খোসার-ব্যবহার

এছাড়াও এই কমলার খোসাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের নানান রকম পুষ্টি জনিত অভাব দূর করে। এ থেকে বলা যায় এটি ডায়বেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকারী আপনারা এটি খেয়ে দেখতে পারেন

আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার উপায়

চুলের যত্নে কমলার খোসার ব্যবহার

কমলার খোসা শুধু মুখেই না এটা আপনি আমাকে চুলেও ব্যবহার করতে পারেন। উপরে বর্ণিত প্রসেসে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন অর্থাৎ এক টেবিল চামচ কমলার খোসার সাথে টক, দই, লেবুর রস মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিবেন সেটা আপনি আপনার চুলে এবং মুখে লাগাতে পারবেন এটি অত্যন্ত উপকারী।

কমলার খসা দিয়ে আপনার চুলের যত্ন নিতে পারবেন সর্বপ্রথম আপনাকে কমলা খোসা ধুয়ে শুকিয়ে নিয়ে সেটাকে পাউডার করে নিতে হবে এরপর তার সাথে নারকেল দুধ দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে হবে তারপর আপনার মাথার চুলের গোড়ায় ব্যবহার করুন তাহলে চুল অনেক শক্ত হবে লম্বা হবে খুশকি দূর হবে চুল সিল্কি করবে এসব নানান ধরনের উপকারিতা রয়েছে।

রুম ফ্রেশনার হিসেবে কমলার খোসার ব্যবহার

অনেক পরিমাণ কমলার খোসা নিয়ে ফুটন্ত গরম পানিতে কমলার খোসা গুলো সিদ্ধ করুন এরপর এর সাথে কিছু সুগন্ধিযুক্ত মসলা মিশিয়ে নিন আপনার রান্নাঘরে যেসব ভ্যানিলা ফ্লেভার মশলা রয়েছে সেগুলা ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে তা থেকে ভালো কিছু হতে পারে। কিছুক্ষন মিশ্রণটিকে রাখতে হবে তারপর ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

কিছুক্ষণ পর দেখবেন আপনার রান্নাঘরটি সুগন্ধে সুগন্ধিত করে দিয়েছে এবং তরতাজা একটি সুবাস নিয়ে আসবে। এ ধরনের ফলের খোসা ফেলে না দিয়ে চাইলে আপনার কিচেন রুম স্বয়ং রুম ইত্যাদিতে রাখতে পারেন দেখবেন আপনার ঘরটির সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছে। 

পেটের সমস্যা দূরীকরণে কমলার খোসা  

কমলার খোসা পেটের সমস্যার সমাধান করে থাকে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটি এবং বমি বমি ভাব দূর করে কমলার খোসা প্রতিদিন সকালে কুচি করে কমলার খোসা এক চামচ পরিমাণ মধুর সঙ্গে খেয়ে নিতে তাহলে দেখবেন আপনার পেটের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এমনকি সকালের নাস্তায় সালাত হিসেবে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

পিত্ত ও কফের সমস্যা দূরীকরণে কমলার খোসা

কমলা খোসার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো কফের সমস্যা দূর করে থাকে এবং পিত্তের সমস্যা দূর করে থাকে প্রথমে কমলার খোসা পাতলা করে ছিলে নিয়ে তারপর ভেজিটেবল পিলারের সাহায্যে গ্রেটার করে ঘষে নিতে হবে পরে কমলার খোসার কুচি গুলো দিয়ে রং চা তৈরি করে ঢেলে নিন সঙ্গে অল্প পরিমাণ আদা দিতে পারেন এবং ফুটন্ত পানিতে কমলার গন্ধ ছড়ালে চায়ের মত পান করতে হবে সাথে আপনার মধু ব্যবহার করতে পারেন তাহলে কপিতে সমস্যা দূর হবে।

পিত্ত-ও-কফের-সমস্যা-দূরীকরণে-কমলার-খোসা

ওজন কমাতে কমলার খোসার ব্যবহার 

ওজন কমাতে কমলার খোসা ব্যবহার অত্যন্ত কার্যকরী উচ্চমাত্রায় কলেজের সমস্যা ওজন কমানোর জন্য কমলা খোসা ব্যবহার খুবই উপযোগী এতে করে টাই গ্লিসারাইড দ্রবীভূত হয়ে থাকে।

অনিদ্রা দূর করনে কমলার খোসার ব্যবহার 

অনিদ্রা দূরীকরণে কমলার খোসা একটি ভালো সমাধান। কুসুম গরম পানিতে কমলার খোসা ফেলে ক্যান্সারও হাড়ের রোগ প্রতিরোধ করে। কমলার খোসা খেলে ক্যান্সারের মতো বড় ঝুঁকিপূর্ণ রোগের সমাধান হয়ে থাকে কমলার খোসায় নানান ধরনের উপকারিতা রয়েছে 

এজমা ও কাশী 

কমলার খোসা এজমা ও কাশীর জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি জিনিস। এমনকি শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যার সমাধান দূর করে থাকে একটি কাশির উপশম্ভব করা এটি নিয়মিত চায়ের মতো পান করলে আপনার কফের সমস্যা ও অ্যাজমার সমস্যা দূর হবে 

কমলার খোসার অপকারিতা 

  • এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে
  • বিশেষ ক্ষেত্রে কমলার খোসা এলার্জি সমস্যা বৃদ্ধি হতে পারে তাই যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই কমলার খোসা থেকে দূরে থাকতে হবে 
  • অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে পেট খারাপ হতে পারে
  • ওষুধের সাথে খেলে কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে 
  • আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান ধরনের ওষুধ খাওয়ার সময় এই কমলার খোসা খেলে অনেক সময় দেখা দিতে পারে তবে এটা সবার ক্ষেত্রে নাও হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ ভাজা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা

শেষকথাঃ কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা

কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আমরা উপরে অনেক কিছুই জানলাম। কমলার খোসার অনেক অনেক উপকারিতা রয়েছে কমলার খোসার উপকারী দিকগুলো বিবেচনা করে আপনারা কমলার খোসা গুলো ব্যবহার করতে পারেন। আপনাদের দৈনন্দিন জীবনে চুলের যত্নে মুখের যত্নে এবং আরো যেগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো ক্ষেত্রে আপনারা ব্যবহার করতে পারেন। তবে যাদের ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে তাদের ক্ষেত্রে না ব্যবহার করাই ভালো তবে কারো ক্ষেত্রেই তেমন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না উপকারের দিকটাই বেশি অপকার নেই বললেই চলে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্ঞান পিপাসুর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url