ডায়াবেটিস রোগীর কাঁচা সজনে পাতার উপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন গাছ ও গাছের পাতা মহা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সজনে পাতা তার মধ্যে অন্যতম। সজনে একটি অতি পরিচিত ও দামি একটি খাবার। এই সজনে পাতার বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা অলিফেয়ার। এটি আমাদের দেশে সুপরিচিত। এই সজনে গাছের মূল, ছাল, বীজ, পাতা ইত্যাদি সবকিছুতেই ঔষধি গুণ বিদ্যমান। সজনে গাছের রাসায়নিক পদার্থ হচ্ছে বিটাসিটোস্টেরল ও একালএডস্মরিনাজিন।
এর ফুলে আছে জীবানু নাশক টিরিগোজপারমিন। সজনে পাতার অনেক উপকারিতা রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগ নিরাময় করে থাকে। সজনে পাতা উপকারিতা জানার পরেও আমাদের কাছে তা অস্পষ্ট যে কি কি উপকারিতা রয়েছে চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত।
পোস্ট সূচিপত্রঃ সজনে পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং সতর্কতা
সজনে পাতার উপকারিতা
সজনে পাতায় ভিটামিন ক্যালসিয়াম আয়রন ও অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে আরো উপকারিতা পাওয়া যায় চলুন আরো জেনে নেওয়া যাকঃ
সজনে পাতায় থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং আইসোথিয়কাইনেটস যা আমাদের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। প্রতিদিন যদি আমরা মাত্র ৫০ গ্রাম সজনে পাতা গ্রহণ করে থাকে তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদর্শ হচ্ছে সজনে পাতার চা এই পাতার মধ্যে থাকে ফাইটো কেমিক্যাল নামের একটি যৌগ যা রক্তের শর্করা কমাতে সাহায্য করে পাশাপাশি এই পাতা চা পান করলে ক্লোরেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে যা আমাদের জন্য অতি জরুরী।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের ঘরে বসে আয় করার উপায়
সজনে পাতা আমাদের শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করে থাকে অন্যান্য শাকের তুলনায় এই সজনে পাতায় পাঁচ গুণ বেশি আয়রন ভিটামিন পাওয়া। যায় কলা থেকে তিনগুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান থাকে। শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে সজনে পাতা অত্যান্ত উপযোগী একটি খাবার। তবে ভালো উপকার পেতে বেশ কিছুদিন নিয়মিত সজনে পাতা ও ডাটা ফুল খাওয়া দরকার। এছাড়া তেমন কোনো ফল পাওয়া যাবে না।
সজনে পাতায় কোলেস্টেরল কমানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান থাকে, এতে করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। সজনে পাতা একটু চমৎকার উৎস আমাদের হৃদরোগ থেকে বাঁচার। এটির রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যা ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কেউ যদি নিয়মিত এ পাতা সেবন করে তাহলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সজিনা পাতায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনটিইনফ্লেমেন্টরি এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলার শুধু আমার নামই শুনেছি এগুলো কি তা আমরা বাস্তবে জানিনা চলুন যেখানে এগুলো কি? এগুলো যদি আমাদের শরীরে থাকে তাহলে আমাদের ত্বক ভালো থাকে, মসৃণ থাক ও ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
ঘুম এবং পুষ্টি উভয়ে একে অপরের সাথে বিশেষভাবে জড়িত। আমাদের শরীরে যদি পুষ্টি ঠিকমতো না থাকে, পুষ্টি চাহিদা পূরণ না হয় তাহলে ঘুম হবে না। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সজনে পাতার মত শক্তিশালী খাবার আমাদের প্রয়োজন যা আমাদের দৈনন্দিন খাবার তালিকায় রাখা অত্যন্ত জরুরী। এটি আমাদের শারীরিক শক্তি বাড়ায় এবং মানসিক শক্তিও পাশাপাশি বৃদ্ধি করে। শরীরকে ভিটামিন দিয়ে ফ্লাস করে এবং প্রদাহ কমায়। দেখা যাবে যাতে আমাদের শরীর ব্যাকটেরিয়া মুক্ত থাকে।
সজনে পাতা কিভাবে গ্রহণ করব
- কাঁচা পাতা খেতে পারেন।
- পাতার রস করে খেতে পারেন।
- সজিনা পাতা শুকিয়ে গুড়া করে চায়ের সঙ্গে খেতে পারেন।
- সজিনা পাতা শাক হিসেবে খেতে পারেন।
- সজনে পাতা পিষে সস করে খেতে পারেন।
- সজনে পাতার স্যুপ করে খেতে পারেন।
- সজনে পাতা সালাদ হিসেবে খেতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ কমলার খোসার উপকারিতা ও অপকারিতা
ডায়াবেটিসে সজনে পাতার ভূমিকা
সজনে পাতা সেবন করলে খালি পেটে ও খাওয়ার দুই ঘন্টা পর পর্যন্ত রক্তে শর্করার পরিমাণ ঠিক রাখে। যারা ইনসুলিন ব্যবহার করেন তারা এটি গ্রহণের ফলে ইনসুলিন কম ব্যবহার লাগে। এটি ইনসুলিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে থাকে।
ডায়াবেটিসের সজনে পাতা ভূমিকা কতটা যুক্তিযুক্ত
আসলেই কি সজনে পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এ বিষয়ে অনেক দ্বিধাদন্ত কাজ করে আমাদের মধ্যে চলুন এবার জেনে আসল তথ্য
সজনে পাতা কিভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এ সম্পর্কে খুব স্বল্প পরিমাণে গবেষণা করা হয়েছে। এইসব গবেষণা থেকে তেমন আশানুরূপ ফল পাওয়া পাওয়া সম্ভব হয়নি। কিছু কিছু গবেষণায় দেখা সজনে পাতা খুব বেশি ব্যবহারের কারণে লিভার ও কিডনির ক্ষতি হতে পারে। আবার কিছু গবেষণা থেকে দেখা গেছে সজনে পাতা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে এলার্জি সমস্যা তীব্র হতে পারে যাতে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকতে পারে।
আবার কিছু গবেষণা দেখা গেছে প্রতিদিন মাত্র ৭ গ্রাম বা আধা চামচ সজনে পাতার গুড়া গ্রহণের ফলে ভিটামিন ও খনিজ লবণ জনিত বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে তবে এটা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সর্বোচ্চ কতটুকু গ্রহণ করা যাবে এ বিষয়ে পুরোপুরি জানা যায়নি। আবার কতটুকু সেবন করলে শরীর বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে এ বিষয়েও তেমন তথ্য পাওয়া যায়নি যা আমাদের অজানা।
সজনে পাতা আমরা কখন গ্রহণ করতে পারবো না
আমাদের শরীরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব থাকলে। আমাদের শরীরে লিভারের সমস্যা থাকলে। নারীদের গর্ভাবস্থায় ও আমাদের শরীরের রক্তের শর্করার পরিমাণ খুব কম থাকলে। কারণ সজনে পাতা গ্রহণের ফলে আমাদের শরীরের রক্ত শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত থাকে। এজন্য যদি আপনার শরীরের রক্ত শর্করার পরিমাণ কম থাকে তাহলে এটি আপনার ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ভাজা ছোলার উপকারিতা ও অপকারিতা
সতর্কতা
আপনারা যারা ডায়াবেটিসের ওষুধের পাশাপাশি সজনে পাতা গ্রহণ করেন, তাদের জন্য সজনা পাতা ও ওষুধ একসঙ্গে গ্রহণ করার ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হতে পারে এজন্য এ দুটি একসঙ্গে ব্যবহার করা উচিত নয়। অনেক সময় সজিনা পাতা আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয় যার ফলে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন থেকে দূরে থাকার কারণে ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে।
এ থেকে বিভিন্ন ধরনের জটিল সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই আপনাদের উচিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সজনে পাতা ব্যবহার করার আগে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের দ্বারা পরামর্শ নিতে পারেন। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে সজনে পাতা গ্রহণ করা মোটেও উচিত হবে না।
জ্ঞান পিপাসুর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url