গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি (উপকারিতা ও সতর্কতা)
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি? এ সম্পর্কে এই ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও জানতে পারবেন খালি পেটে জাম্বুরা খেলে কি হয়? চলুন জানা যাক- গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরে পুষ্টি চাহিদা অনেক বেড়ে যায়, তাই এসময়টাকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।
শুধু মায়েদের শরীরের উপকারের জন্যই নয় শিশুর সুস্থ মস্তিষ্ক ও দেহ গঠনে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মায়েরাই জানেন না এই সময়টাতে কি কি খাওয়া যাবে এবং কি কি খাওয়া যাবেনা! গর্ভাবস্থায় কিছু কিছু ফল খাওয়া নিরাপদ নয়। চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত
পোস্ট সূচীপত্রঃ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি
- গর্ভাবস্থায় পুষ্টি গ্রহণের গুরুত্ব, কেন এটি এড়ে চলা উচিত নয়
- অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর জাম্বুরা
- গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার ফলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
- জাম্বুরা খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা
- জাম্বুরা ফল কতটুকু খাওয়া নিরাপদ
- জাম্বুরা খাওয়ার আদর্শ সময়
- জাম্বুরা বিকল্প ফল
- জাম্বুরা খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
- জাম্বুরা খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারদের মতামত
-
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
-
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
- শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি? গর্ভাবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়, এ সময় যে কোন কিছু খাওয়ার আগে সেটার গুনাগুন বা সর্তকতা গুলো জেনে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীরের নানা ধরনের পরিবর্তনের কারণে পুষ্টি চাহিদা বেড়ে যায়, এসময় শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য অর্থাৎ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সঠিকভাবে হওয়ার জন্য শরীরে সঠিক পরিমাণে পুষ্টি থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এখন প্রশ্ন হলো গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি? হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। জাম্বুরা একটি পুষ্টিকর ফল যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভাবস্থায় হরমোনের নানান ধরনের পরিবর্তনের ফলে শরীরের পুষ্টি চাহিদা অনেক বৃদ্ধি পায়। এ সময়ে সঠিক পরিমাণে পোস্টটি শরীরে পাওয়ার জন্য এবং শিশু সুস্থ বিকাশের জন্য জাম্বুরা খাওয়া যাবে। গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত জরুরী।
আরো পড়ুনঃ শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার ১০ টি উপায়
গর্ভাবস্থায় পুষ্টি গ্রহণের গুরুত্ব, কেন এটি এড়িয়ে চলা উচিত নয়
গর্ভাবস্থায় পুষ্টি গ্রহণের গুরুত্ব অনেক, কারণ এটি মাতৃস্বাস্থ্য ঠিক রাখে এবং গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে থাকে। শরীরে পুষ্টির অভাব থাকার ফলে মা এবং গর্ভস্থ শিশু উভয়েরই বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভস্থ শিশুর সঠিক বিকাশ এবং বৃদ্ধির জন্য পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভস্থ শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশের জন্য সঠিক পরিমাণে পুষ্টি বজায় রাখা জরুরী। ফলিক অ্যাসিড নিউরাল টিউব ডিফেক্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে যদি সঠিক পরিমাণে পুষ্টি না থাকে তাহলে রক্তস্বল্পতা, হাড়ের দুর্বলতা এবং ক্লান্তির মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও প্রোটিন থাকলে প্রসবকালীন সকল জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। অপুষ্টি জনিত কারণে গর্ভস্থ শিশু জন্মানোর সময় সঠিক ওজন থাকে না। শরীরের সঠিক পরিমাণে পুষ্টি বজায় না থাকার জন্য মায়ের এবং শিশুর উভয়েরই দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হতে পারে।
অসংখ্য পুষ্টিগুণে ভরপুর জাম্বুরা
জাম্বুরা তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। এটি আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। প্রতি ২০০ গ্রাম জাম্বুরায় যে সব পুষ্টির গুনাগুন থাকে
- ক্যালোরি ৭৬ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট ১৯.২ গ্রাম
- প্রোটিন ১.৫২ গ্রাম
- ফাইবার ২ গ্রাম
- চর্বি ০.০৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি ১২২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৪৩২ মিলিগ্রাম
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্ল্যাটের
- এছাড়াও ভিটামিন এ, বি১, বি২ ও বি৬ থাকে
আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিতভাবে আদ্য তালিকায় এটি রাখতে পারেন। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং সুস্বাদু একটি খাবার, আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির ১০টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার ফলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া অনেক উপকারী। জাম্বুরাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে তাই গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। মা এবং গর্ভস্থ শিশু উভয়ের জন্য জাম্বুরা অনেক উপকার বয়ে আনে।
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার ফলে যেসব উপকার পাবেন
ভিটামিন সি এর ভালো উৎস
- জাম্বুরাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- এটি শরীরের টিস্যু পুনর্গঠনে সহযোগিতা করে, যা গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফলিক এসিডের দারুন উৎস
- গর্ভাবস্থায় মায়েদের ফলিক এসিড খাওয়া জরুরী। ফলিক এসিড শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশ এবং নিউরাল টিউব এর ডিফেক্ট প্রতিরোধ করে থাকে।
হজম শক্তির উন্নতি ঘটায়
- জাম্বুরায় ফাইবার থাকে যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
- এটি আমাদের অন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হজমে সহযোগিতা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখে
- জাম্বুরায় পটাশিয়াম থাকে যা আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সহযোগিতা করে।
- গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে থাকে এটি প্রতিরোধ করতে জাম্বুরা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ডিহাইড্রেশন ও রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে
- গর্ভাবস্থায় শরীরে পানি সঠিক পরিমাণে বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাম্বুরায় অধিক পরিমাণে জলীয় অংশ থাকে যা শরীরকে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
- জাম্বুরায় ভিটামিন সি থাকে যা আমাদের শরীরের আয়রন শোষণ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- জাম্বুরায় ক্যালোরি কম থাকে এবং ফাইবার উচ্চমাত্রায় থাকে, যা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ ওজনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
আরো কিছু পোস্ট সমূহঃ
গর্ভাবস্থায় শসা খাওয়া যাবে কি এটি স্বাস্থ্যকর না ক্ষতিকর
জাম্বুরা খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি? এরকম প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন, হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে এটি খাওয়ার ব্যাপারে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া উপকারী হলেও এটি খাওয়ার বিষয়ে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। এই জাম্বুরা খাওয়ার বিষয়ে কিছু ঝুঁকির দিক রয়েছে।
- জাম্বুরা একটি সাইট্রাস ফল, যার ফলে পেটের অম্লতা বৃদ্ধি করতে পারে যা গ্যাস বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের ডায়াবেটিস হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকে, জাম্বুরায় প্রাকৃতিক চিনি থাকে যা রক্তশর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- কিছু কিছু মায়েদের ক্ষেত্রে জাম্বুরা খাওয়ার ফলে এলার্জির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
জাম্বুরার অপকারিতা না থাকলেও সতর্কতা গুলো মেনে জাম্বুরা খাওয়া উচিত। সকল কিছুই পরিণত পরিমাণে সর্তকতা মেনে খাওয়া উচিত।
জাম্বুরা ফল কতটুকু খাওয়া নিরাপদ
অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়, হোক সেটি খাওয়ার ব্যাপারে বা কোন কিছু করার ব্যাপারে। সকল বিষয়ে পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখা উচিত। গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা অনেক, এজন্য অত্যাধিক পরিমাণে খাবো তা করা যাবে না। গর্ভবতী মায়েরা প্রতিদিন এক থেকে দুই টুকরা অর্থাৎ ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম (এক কাপ টুকরো করা জাম্বুরা) খাওয়া নিরাপদ এবং উপকারী বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করে থাকেন। যদি এই গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিস বা অম্লতার সমস্যা থাকে তাহলে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন খেতে পারেন।
খালি পেটে জাম্বুরা খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত, চামড়া খালি পেটে খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। প্রথমে এটি আপনি অল্প পরিমানে খেয়ে দেখতে হবে যে এটি কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে কিনা। যদি এটি খাওয়ার ফলে শরীরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তাহলে এটি খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে বা বাদ দিতে হবে। যদি উচ্চ রক্তচাপ ও ক্লোরেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের ওষুধ সেবন করে থাকেন তাহলে এটি খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। জাম্বুরার অনেক উপকারিতা রয়েছে কিন্তু জাম্বুরার অপকারিতা নেই শুধু রয়েছে এর কিছু সর্তকতা। এই সতর্কতা গুলো মেনে চলা উচিত।
আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
জাম্বুরা খাওয়ার আদর্শ সময়
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার সঠিক সময় নির্ভর করে শরীরের প্রতিক্রিয়া এবং স্বাস্থ্যের উপর। তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ে জাম্বুরা খাওয়ার ফলে আপনার শরীরে বেশি উপকার দিতে পারে।
জাম্বুরা খাওয়ার আদর্শ সময়
ব্রেকফাস্ট করার পর
- সকালে খালি পেটে খেলে গ্যাস্টিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে, তাই সকালে নাস্তা করার পরে খাওয়া উচিত।
- এটি দিনের শুরুতে খেলে শরীরে শক্তি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
দুপুরে খাওয়ার আধাঘন্টা পর
- দুপুরে খাবার খাওয়ার পরে খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
- দুপুরে খাওয়ার পরে খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
বিকেলে হালকা নাস্তার সময়
- বিকেলে নাস্তা হিসেবে জাম্বুরা দারুন একটি উপাদান, জাম্বুরা হালকা প্রোটিনের সঙ্গে খাওয়া যেতে পারে যেমন বাদাম ও দই।
- বিকেলে নাস্তায় এটি খেলে গর্ভকালীন ক্রান্তি দূর করতে সাহায্য করে।
যে সময় জাম্বুরা খাওয়া উচিত নয়
- ❌ জাম্বুরা খালি পেটে খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- ❌ জাম্বুরা রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়া উচিত নয় কারণে এটি হজম হতে সময় লাগে যার ফলে রাতে গ্যাস্ট্রিক বা জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জাম্বুরার অপকারিতা নেই তবে এর সতর্কতা কোন মেনে চলে সঠিক সময়ে খাওয়া উচিত।
জাম্বুরার বিকল্প ফল
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে তবে গর্ভাবস্থায় অনেক সময় মায়েরা জাম্বুরা খেতে পারেন না বা এটি খেতে অপছন্দ করেন। তাদের ক্ষেত্রে এই জাম্বুরার কিছু বিকল্প ফল রয়েছে যেগুলো জাম্বুরের মতোই পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে। জাম্বুরার বিকল্প ফল হিসেবে কমলা, মালটা, লেবু, আমলকি, পেয়ারা, আনার ও তরমুজ খেতে পারেন।
- কমলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীর হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে ও শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটে সাহায্য করে।
- মালটার প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও এন টি অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে থাকে এটি গ্যাস্ট্রিকের ঝুকি কমায়।
- অনেকে জানেন না গর্ভাবস্থায় লেবু খাওয়া যাবে কি? হ্যাঁ যাবে। লেবু মর্নিং শিখনে দূর করতে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- আমলকি ভিটামিন সি এর চমৎকার একটি উৎস যার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে এবং হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে যার ফলে কষ্ট পায় না সমস্যা দূর করতে সহায়ক হয়।
- পেয়ারা ফাইবার ভিটামিন সি সমৃদ্ধ উপাদান থাকে যা অন্ত্রের ভালো রাখে এবং রক্ত সর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখে।
- আনার ফলে আয়রনো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যারা রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী এবং গর্ভবতী শিশুর বিকাশে সহায়ক পালন করে।
- তরমুজ শরীর হাইড্রেট রাখতে অত্যন্ত সাহায্যকারী ভূমিকা পালন করে, গরমকালে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য ও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য দারুন একটি উপাদান।
যদি গর্ভাবস্থায় মায়েরা জাম্বুরা খেতে না পারেন তাহলে এই ফলগুলো খেলে শরীরে একই পুষ্টি সরবরাহ করবে।
আরো পড়ুনঃ কিশোরীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন
জাম্বুরা খাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়ার ব্যাপারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে এটি আমাদের জন্য এটা নিরাপদ ও উপকার হয়। পরামর্শ গুলো হলঃ অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া এড়িয়ে চলা অর্থাৎ পরিমিত পরিমাণে খাওয়া। খালি পেটে জাম্বুরা না খাওয়া। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা থাকলে সর্তকতা অবলম্বন করা। ডাক্তার পরামর্শ নিয়ে খাওয়া যাতে ঔষধ খাওয়ার ফলে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।
জাম্বুরা খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়া অর্থাৎ রাসায়নিক কীটনাশক মুক্ত জাম্বুরা খাওয়া। জাম্বুরা খাওয়ার ফলে শরীরের পরীক্ষা লক্ষ করা উচিত। যদি জাম্বুরা খেতে না পারেন তাহলে উপরে বর্ণিত বিকল্প ফলগুলো খেতে পারেন। কিছু পরামর্শ উপরে উল্লেখ করলাম গর্ভবতী মায়েদের এগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাম্বুরা খাওয়ার ব্যাপারে ডাক্তারদের মতামত
গর্ভাবস্থার জামুরা খাওয়ার বিষয়ে ডাক্তারগণ কিছু পরামর্শ দিয়ে থাকেন সে পরামর্শ গুলো মেনে সতর্কতা অবলম্বন করে চলা উচিত। ডাক্তারদের মতামত হলোঃ জাম্বুরা খাওয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা অর্থাৎ পরিমিত পরিমাণে খাওয়া। গর্ভকালীন সময় ডায়াবেটিস বা নিম্ন রক্তচাপ থাকলে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গর্ভকালীন এই সময়টা অত্যন্ত সংবেদনশীল তাই এই সময়ে সকল কিছু ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ বা ক্লোরেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ওষুধ খাওয়া চলাকালীন সময়ে জাম্বুরা খাওয়ার ফলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে তাই এরকম কিছু লক্ষ্য করলে ডাক্তারদের পরামর্শ নেয়া উচিত। প্রথমবার খাওয়ার পরে শরীরের প্রতিক্রিয়া গুলো লক্ষ্য করা উচিত। উপরে বর্ণিত ডাক্তারদের মতামত গুলো মেনে জাম্বুরা খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ লুডু গেম খেলে প্রতিদিন ৫০০ টাকা আয় পেমেন্ট বিকাশে
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
যে ফলগুলো এড়িয়ে চলা উচিতঃ
- পেঁপে - আধা পাকা পেঁপে গর্ভাবস্থায় গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এতে লেটেক্স থাকে যা মায়েদের জরায়ু সংকুচিত করে থাকে।
- আনারস - এতে ব্রোমেলিন নামক এক ধরনের এনজাইম থাকে যা জরায়ুর নরম করে ফলে অকাল প্রসব হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- লিচু - গর্ভাবস্থায় লিচু খেলে রক্ত শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায় যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- আঙ্গুর - গর্ভাবস্থায় শেষের তিন মাসে আঙ্গুর না খাওয়াই উত্তম। কারণ এতে রেসভেরাট্রল নামক যৌগ বিদ্যমান থাকে যা হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে।
যে ফলগুলো সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত
- কলা, নাশপাত, আপেল ও আম এগুলা খাওয়া নিরাপদ তবে নিয়ন্ত্রিতভাবে খেতে হবে।
- বেশি মিষ্টি জাতীয় ফল যেমনঃ কাঁঠাল ও ভালোভাবে পাকা আম।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না? গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ সবজি খাওয়া যাবে, তবে কিছু কিছু সবজি এড়িয়ে চলা উচিত এবং কিছু কিছু সবজি সীমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক বিস্তারিত
যেসব সবজি এড়িয়ে চলা উচিত
- কাঁচা বা অল্প সেদ্ধ সবজি - কাঁচা বেগুন, কাঁচা শাক, ব্রকলি এবং বাঁধাকপি এগুলোতে ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী দ্বারা আক্রমণ হতে পারে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
- আলু - পুরনো আলুতে সোলালিন নামক বিষাক্ত যৌগ থাকে যা গর্ভস্থ শিশুর বিকাশে বাধা প্রদান করে।
- কাঁচা পেঁপে - কাঁচা পেঁপেতে পেপেইন নামক যৌগ থাকে যা জড়ায় সংকোচন এবং গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- কাঁচা টমেটো - কাঁচা টমেটো এসিডিটির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যা গর্ভাবস্থায় এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
- মেথি - মেথি জরায় সংকোচন ঘটিয়ে থাকে যার ফলে অকালে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যেসব সবজি অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত
- ঢেঁড়স - এতে উচ্চমাত্রার অক্সালেট যৌগ থাকে যা কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।
- গাজর - গাজর অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে শরীরে বেটা ক্যারোটির যৌগ শরীরে বেশি পরিমাণে জমা হয় যা লিভারের উপর চাপ সৃষ্টি করে থাকে।
- পেঁয়াজ ও রসুন - পেঁয়াজ ও রসুন হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে তাই অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় কি কি খাওয়া যাবে না? এরকমটা অনেক মায়েরাই জানতে চান। উপরে উল্লিখিত সবজিগুলো বাদে
পালং শাক, পুঁই শাক, লাউ, শিম, শসা, কুমড়ো, ফুলকপি এবং
বাঁধাকপি ইত্যাদি খাওয়া পুরোপুরি নিরাপদ। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় যদি
কোন খাবার বা সবজি নিয়ে আপনার সন্দেহ হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ
করুন।
আরো পড়ুনঃ জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় চিড়া খাওয়া যাবে কি
অনেক সময় অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন যে চিড়া খাওয়া যাবে কি? হ্যাঁ গর্ভাবস্থায় চিড়া খাওয়া যাবে। ছেঁড়া খাওয়ার অনেক উপকারিতা ও রয়েছে। চিড়া খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়, আয়রন ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ফাইবার থাকে। এতে আয়রন ও ফাইবার থাকায় এটি খাওয়ার ফলে শরীরে অনেক শক্তি যোগায়। চিনা হালকা তাই সহজে হজম হয়। এরকম আরো নানান ধরনের উপকারিতা রয়েছে এই চিড়াতে।
তবে এই চিড়া খাওয়ার ব্যাপারে কিছু সতর্কতা হলো, অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি বা দুধ মিশিয়ে চিড়া খাওয়া যাবে না। বাইরে খোলা পরিবেশে থাকা চিড়া খাওয়া যাবে না কারণ এতে ধুলাবালি যুক্ত হয় যা আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি
গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি, গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া উপকারী তবে এটি খাওয়ার ব্যাপারে পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখা উচিত। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয় আর যেহেতু এই গর্ভাবস্থা একটি সংবেদনশীল সময় তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। প্রতিটি মায়ের শরীর ভিন্ন তাই প্রথমবার এটি খাওয়ার পরে যদি কোন প্রতিক্রিয়াকে দেখা দেয় তাহলে সেটির দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এটি কোন ভাবে অবহেলা করা যাবে না।
প্রতিটি মায়ের শরীরের ভিন্ন তাই গর্ভকালীন সময় খাবার গ্রহণের ব্যাপারে অধিক সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। গর্ভাবস্থায় মায়ের জাম্বুরার পাশাপাশি আরো অন্যান্য পুষ্টিকর ফলমূল বা খাবার গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থা হলো গুরুত্বপূর্ণ সময় এ সময়ে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশ ঘটে থাকে তাই এ সময়টাতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
জ্ঞান পিপাসুর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url