পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা ও তাদের রহস্যময় জগৎ

পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা এবং বছরের কোন সময় দেখা যায় এ সম্পর্কে আজকে আপনাদেরকে এই ব্লগে জানাবো। পরিযায়ী পাখি বলা হয় মূলত সেসব পাখিদের যারা বছরের নির্দিষ্ট এক ঋতুতে ভাত পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমন করে থাকে।

পরিযায়ী-পাখির-নামের-তালিকা

তাদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার মূল কারণ হলো অনুকূল আবহাওয়া খোঁজা, খাদ্য সন্ধান, নিরাপদ প্রজনন ও বসবাসের সুবিধার্থে। তারা যেই স্থানে বসবাস করছিল সেই স্থানের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার জন্য তারা একই স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তরিত হয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা 

পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা

পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা, বিশ্বে হাজার হাজার প্রজাতির পরিযায়ী পাখি রয়েছে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন প্রধান গোষ্ঠীর মধ্যে কিছু পরিচিত পরিযায়ী বা অতিথি পাখির নামের তালিকা তুলে ধরা হলো

পরিযায়ী পাখির শ্রেণীবিভাগ ও তালিকা

শিকারি পরিযায়ী পাখির তালিকা

  • রেড কাইট
  • গোল্ডেন ঈগল 
  • ইউরেশিয়ান হবি
  • ওসপ্রে
  • পারেগ্রিন ফ্যালকন 

জলচর পরিযায়ী পাখি

  • গাডওয়াল
  • নাকতা
  • লালশির 
  • চখাচখি
  • ট্রুন্ড্রা সোয়ান
  • ম্যালার্ড
  • হুইস্টলিং

উপকূলীয় ও জলাভূমির পাখির নামের লিস্ট

  • বার-টেইল্ড গডগাউট
  • গ্রেট নট
  • ব্ল্যাক-টেইল্ড গডগাউট
  • পাইড অ্যাডভোসেট
  • ইউরোপিয়ান গোল্ডেন প্লোভার
  • লিটল স্টিন্ট

বৃহৎ ও দীর্ঘ পথ পাঁচটি পরিযায়ী পাখির নাম

  • আর্টিক টার্ন 
  • গ্রেট হেরন
  • হুপো
  • ডেমোসেল ক্রেন
  • সাপ্তাহিক ক্রেন 

ছোট গানের পাঁচটি পরিযায়ী পাখির নাম

  • কমন সুইফট 
  • বার্ন স্বালো
  • ইউরেশিয়ান ব্লাকক্যাপ
  • উইলো ওয়ার্কলার
  • রেড-ব্যান্ড শ্রাইক

উপরে পরিযায়ী বা অতিথি পাখির নামের তালিকাতে বিশ্বের হাজারো পরিযায়ী পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পরিযায়ী পাখির নাম তুলে ধরা হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ শারীরিক ফিটনেস বজায় রাখার ১০ টি উপায়

বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা 

বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা জানতে চান অনেকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ শীতকালীন সময়ে প্রচুর পরিমাণে পাখি আসে। তারা মূলত উত্তর ও মধ্য এরশাদ দেশগুলো থেকে আমাদের এ দেশে আসে। তারা আমাদের দেশে এসে হাওর বাওর বিল নদী নালা ও জলাশয় অবস্থান করে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক সেসব পাখির নামগুলি 

হাঁস ও জলচর জাতীয় পাঁচটি পরিযায়ী পাখির নাম 

  • সরালি হাঁস 
  • পিয়াং হাঁস 
  • গাডোয়াল 
  • নীল গলা হাঁস 
  • রাজ সরালি হাস

বক ও পানকৌড়ি জাতীয় হাঁস 

  • ধূসার বক
  • কালো পানকৌড়ি 
  • সাদা বক 
  • রাতচরা বক 
  • বড় পানকৌড়ি 

গাংচিল ও শিকারি পাখির নামের লিস্ট

  • কালো মাথা গাংচিল 
  • ধূসর গাংচিল 
  • অজগর গাংচিল 
  • মাছরাঙ্গা ঈগল 

প্লোভার, গটউইট ও সিলসাট পাখির নামের লিস্ট

  • পাতিচিল সাট
  • ছোট চিলসাট
  • প্যাসিফিক গডউইট

অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পরিযায়ী পাখি 

  • পাতি হাড়িচাচা
  • জল পিপি 
  • পাতি মাছরাঙ্গা 
  • লালমাথা চিল

উপরে বাংলাদেশের পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত পাখিগুলো প্রতিবছরে বাংলাদেশে আসে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পার করে। আমাদের এই সৌন্দর্য কে টিকিয়ে রাখার জন্য জল দূষণ, বন নিধন ও অবৈধ শিকার এর বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিযায়ী পাখির রহস্যময় ভ্রমণ

পরিচয় পাখি হলো এমন এক ধরনের পাখি যারা প্রতিবছর নির্দিষ্ট একটি ঋতুতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে স্থান পরিবর্তন করে থাকে। তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিযান করে কারণ হলো অনুকুল আবহাওয়ার অনুসন্ধান খুঁজতে, নিরাপদ বাসস্থান পেতে, খাদ্যের সন্ধানে এবং প্রজনন ঘটানোর জন্য।

পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বা অঞ্চলে লাখ লাখ পরিযায়ী পাখি দেখা যায় যেগুলো হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়।

পরিযায়ী-পাখির-রহস্যময়-ভ্রমণ

পরিযায়ী পাখিরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে এবং বাস্তুসংস্থান রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই বাস্তুসংস্থান আবার কি? বাস্তুসংস্থান হল একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জীব ও পরিবেশের সাথে পারস্পারিক সম্পর্কের একটি সমন্বিত ব্যবস্থা।

এটি সকল জীবজগৎ অর্থাৎ উদ্ভিদ প্রাণী অনুজিব সকল কিছু এবং তাদের আশেপাশের যত জড়ো পদার্থ রয়েছে সকল উপাদান নিয়ে গঠিত। বাস্তুসংস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাস্তুসংস্থান আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে, বাস্তুসংস্থানের ফলে খাদ্য শৃংখল ও খাদ্যজাল তৈরি হয়, বাস্তুসংস্থান কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে ও অক্সিজেন উৎপাদন করে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সহায়তা করে।

আরো পড়ুনঃ ডিজিটাল প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে কিভাবে পরিবর্তন করেছে

পরিযায়ী পাখি কাকে বলে এবং কেন তার ভ্রমন করে

পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা উপরে তুলে ধরা হয়েছে। পরিযায়ী পাখি বলা হয় মূলত সে সব ধরনের পাখিদেরকে যারা ঋতু পরিবর্তনের কারণে বা পরিবেশগত কারণে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। পরিযায়ন  হলো এক ধরনের জটিল ও কঠিনতম বিষয়।

পাখিরা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঠান্ডা স্থান থেকে উষ্ণ স্থানে আসে আবার অনেক পাখিরা উষ্ণ স্থানের আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরে অন্যত্র ঠান্ডা স্থানে চলে যায়। পরিযায়ী পাখিরা স্থায়ীভাবে স্থান পরিবর্তন করলেও পরবর্তীতে নির্দিষ্ট ঋতু শেষ হওয়ার পর আবার আগের স্থানে ফিরে যাই। 

পরিযায়ী পাখির ভ্রমণের ভ্রমণের কারণগুলো হলঃ

  • আবহাওয়ার পরিবর্তন - গ্রীষ্মকালে গরম আবহাওয়া উপেক্ষা করার জন্য তদ অপেক্ষা ঠান্ডা আবহাওয়ার স্থানে স্থানান্তর হয়। 
  • খাদ্যের অভাব - শীতকালে অনেক সময় অনেক স্থানে খাবারের ঘাটতি দেখা দেয় সে সময় তারা খাদ্য সন্ধানের জন্য ভ্রমণ করে।
  • প্রজনন উপযুক্ত পরিবেশ - কিছু কিছু পাখি তাদের বংশ বিস্তার করার জন্য অনুকূল পরিবেশে পরিভ্রমণ করে থাকে। 
  • নিরাপত্তার প্রয়োজনে - শিকারি প্রাণী থেকে বাঁচার জন্য বা প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য অনুকূল পরিবেশে পরিভ্রমণ করে থাকে। 

পাখিদের জন্য পরিযায়ন জন্য জরুরী কারণ এটি তাদের টিকে থাকার লড়াইয়ের একটি অংশ। পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা এবং বছরের কোন সময় দেখা যায় তাই ব্লগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে অবশ্যই পুরো পোস্টে মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

পরিযায়ী পাখির বিস্ময়কর পরিযানের কারণ

পরিযায়ী পাখিগুলোর পরিযানের মূল কারণ নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যায় যে পরিযায়ী এগুলো তাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সন্ধান করার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বিশ্বব্যাপী পরিযায়ন করে থাকে।

প্রতিবছর এই পরিযায়ন কারী পাখিগুলো হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শীতল স্থান থেকে উষ্ণ স্থানে তাদের প্রজনন ঋতুতে ফিরে আসে। অনেক অঞ্চলে শীতকালে আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমে গেলে তাদের খাদ্য সংকট দেখা দেয় তখন তারা এই খাদ্য সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিযায়ন করে।

পরিযায়ী-পাখির-বিস্ময়কর-পরিযানের-কারণ

অনেক সময় শীত প্রধান দেশে প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত হয় এবং প্রবল ঠান্ডা বাতাস বয়, এ সময় তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে তাই তারা নিজেদের জীবনকে বাঁচানোর জন্য প্রশ্ন এলাকায় পরিযায়ন করে।

এছাড়াও অনেক সময় পরিযায়ী পাখিগুলো শীতার্ত অঞ্চল থেকে উষ্ণ অঞ্চলে গিয়ে তাদের প্রজনন করে কারণ সেখানে তাদের খাদ্যের প্রাচুর্য থাকে এবং শিকারের সংখ্যা কম থাকে এতে করে তাদের প্রজননে অনেক সুবিধা হয়।

শীতের সময় দ্রুত সন্ধানেমে আসে যার ফলে পাখিদের খাবার সংগ্রহ করার সময় স্বল্প হয়ে যায়, এতে করে তাদের অনেক সময় সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই তারা উষ্ণ স্থানে চলে যায় যাতে করে তাদের খাবার সংগ্রহের সময়টা একটু বেশি পাওয়া যায়।

অনেক সময় একই স্থানে বেশি পাখি থাকার জন্য তাদের খাবারের ও আবাসনের উপর প্রতিযোগিতা বেড়ে যায় তাই তারা এ প্রতিযোগিতা কাটিয়ে ওঠার জন্য পরিযায়ন করে।

অনেক পরিযায়ী পাখির তাদের বৈশিষ্ট্যগত একটি অভ্যাস থাকে যে তারা নির্দিষ্ট সময় পর পর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাত্রা করবে। এটি মূলত তাদের পূর্বপুরুষ থেকে পাওয়া একটি ঐতিহ্য যা তারা অনুসরণ করে।

তারা তাদের এই ঐতিহ্যগত রীতি নিয়ে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গিয়ে পরিযায়ন করে থাকে। পাখিদের এই পরিযান প্রকৃতির জন্য বিস্ময়।

পরিযায়ী পাখির বিস্ময়কর প্রকারভেদ 

পরিযায়ী পাখিদের বিস্ময়কর পরিযানের প্রক্রিয়া তাদের জীবনের একটি অংশ ও টিকে থাকার কৌশলের একটি অংশ। এক এক পাখিদের এক এক রকম পরিজনের কারণ রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক 

  • ঋতুভিত্তিক পরিযায়ী পাখি - ঋতুভিত্তিক পরিযায়ী পাখিগুলো বিশেষ ঋতুর কারণে একই স্থান থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়। 
  • দৈনিক পরিযায়ী পাখি - দৈনিক পরিযায়ী পাখিগুলো প্রতিদিন খাবার সংগ্রহ করার জন্য বা নিজের নিরাপত্তার জন্য একই স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। 
  • সংক্ষিপ্ত দুরুত্বের পরিযায়ী পাখি - সংক্ষিপ্ত দূরত্বের পরিযায়ী পাখিগুলো খুব বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে না এরা কাছাকাছি অঞ্চলে নিজেদের স্থান পরিবর্তন করে থাকে।
  • দীর্ঘ দূরত্বের পরিযায়ী পাখি - দীর্ঘদিন দূরত্বের পরিযায়ী পাখিগুলো হাজার হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পরিভ্রমণ করে থাকে। 
  • উচ্চতা পরিযায়ী পাখি - উচ্চতা পরিযায়ী পাখিগুলো গ্রীষ্মকালে উঁচু স্থানে অর্থাৎ পার্বত্য এলাকায় চলে যায় এবং শীতকালে সমতল ভূমিতে নেমে আসে। 
  • আংশিক পরিযায়ী পাখি - আংশিক পরিযায়ী পাখি গুলো বলতে বোঝায় একই প্রজাতির সকল পাখির মধ্যে কিছু পাখি পরিভ্রমণ করে এবং কিছু পাখি সেখানেই থেকে যায়।
  • জলাভূমির পরিযায়ী পাখি - জলাভূমির পরিযায়ী পাখিরা জলাভূমি ও উপকূলীয় অঞ্চলে পরিযান করে থাকে।
  • রাতের পরিযায়ী পাখি - রাতের পরিযায়ী পাখিরা রাত্রে পরিভ্রমণ করে থাকে, যাতে তাদেরকে শিকার করতে পারে বা তারা শিকার করতে পারে।

সারা বিশ্বের ভ্রমণকারী পরিযায়ী পাখির তালিকা 

নানান ধরনের পরিযায়ী পাখি পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে কিছু পাখি সারা বিশ্বে ভ্রমণ করে থাকে চলুন জেনে যাক সেসব পাখির নাম 

বিশ্বজুড়ে পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা

  • স্বর্ণশীর্ষী সিগারেট - এ পাখিটি নির্দিষ্ট একটি  মৌসুমী ভ্রমণ করে থাকে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম পরিযানকারী একটি পাখি। এটি প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়।
  • অ্যালপাইন সোয়ালা - এটিও একটি মৌসুমী পরিভ্রমণকারী পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। এটি অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তর মাধ্যাকর্ষের দিকে চলে যায়।
  • ভারসিটাইল ফ্লেমিঙ্গো - এটিও একটি মৌসুমী পরিযানকারী পরিযায়ী পাখি। এই অতিথি পাখিটি দক্ষিণ এশিয়া থেকে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে পরিযায়ন করে থাকে।
  • মান্টারেপ - এটিও একটি মৌসুমী পরিযানকারী পরিযায়ী পাখি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম পথ পাড়ি দেয়া পাখি। এটি প্রতিবছর প্রায় ৭৫ হাজার কিলোমিটার পথ পরিভ্রমণ করে থাকে। 
  • ধূসর গিজার - এটিও একটি মৌসুমীর উপরে পরিযানকারী পাখি। এটি ইউরোপ থেকে এশিয়া এবং আফ্রিকা পর্যন্ত যাতায়াত করে থাকে।
  • ভাঙ্গাচোরা পিঁপড়ে পাখি - এটিও একটি মৌসুমী পরিক্রমণকারী পাখি এটি একাধিক মহাদেশে যাতায়াত করে থাকে। বিশেষ করে উষ্ণ অঞ্চলে পরিভ্রমণ করে থাকে। 
  • মিডওয়ে পিঁপড়া পাখি - এটিও একটি মৌসুমী পরিক্রমণকারী পরিযায়ী পাখি। শীতের সময় এই পাখিটির প্রশান্ত মহাসাগরে চলে আসে। 
  • হক মাইগ্রেন্ট - এটিও একটি মৌসুমী করে পরিক্রমণকারী পরিযায়ী পাখি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন পাখি। এটি বিশ্বজুড়ে এবং পরিভ্রমন করতে সক্ষম।

আরো পড়ুনঃ রূপচাঁদা মাছের ক্ষতিকর দিক (স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা)

বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির আগমন 

বাংলাদেশের প্রতিবছরে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে, পরিযায়ী পাখিরা বাংলাদেশে মূলত শীতকালীন মৌসুমে আগমন করে থাকে। এই পাখিগুলো শীতের সময়ে বাংলাদেশে উষ্ণ পরিবেশ পাওয়ার জন্য এসে থাকে।

বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এসব পাখিরা নিজেদের ঘাটি করে থাকে, যেমন চট্টগ্রাম সুন্দরবন বরিশাল কক্সবাজার এবং হাউর অঞ্চলগুলোতে পুকুরে ও জলাশয়ে নিজেদের ঘাঁটি তৈরি করে থাকে।

বাংলাদেশে-পরিযায়ী-পাখির-আগমন

বাংলাদেশে এসব পরিচয় পাখির আগমন প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন। এছাড়াও এই পাখিগুলো আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি সচেতন করে তোলে। এই পড়ে যায় পাখিগুলো আমাদের এখানকার জলাভূমিতে স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিযায়ী পাখির উপকারিতা অনেক এটি আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখে। এই পাখিগুলো আমাদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করে থাকে। এছাড়াও এর পরিচয় পাখিগুলো আমাদের পথ প্রদর্শক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

পরিযায়ী পাখিদের জন্য হুমকি 

পরিযায়ী পাখিগুলো আমাদের পরিবেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে তারা পরিভ্রমন করার সময় বিভিন্ন রকম হুমকির সম্মুখীন হয়ে থাকে যা তাদের বাসস্থান বংশবৃদ্ধি ও টিকে থাকার জন্য বিপদজনক। নিচে হুমকির বড় কিছু কারণ তুলে ধরা হলো 

আবাসস্থলের ক্ষতি 

বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাস্তাঘাট কৃষি জমি সম্প্রসারণ করার জন্য পাখিরা যেসব স্থানে থাকে যেমন বন জঙ্গল জলাশয় বনভূমি উপকূলীয় অঞ্চল। এগুলো আমরা দিনে দিনে ধ্বংস করে ফেলছি।

এছাড়াও অনেক সময় এই পরিভ্রমণকারী পাখিগুলো তাদের এই চলার পথে নিরাপদ একটি আবশ্যল খোঁজে কিন্তু অভয়ারণ্য সংকোচন করার জন্য তাদের নিরাপদ বাসস্থান পাচ্ছে না।

পরিবেশগত পরিবর্তন ও অবৈধ শিকার 

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাখিদের অভিবাসন প্রক্রিয়ার উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ছে। প্রতিকূল আবহাওয়া সৃষ্টির ফলে তাদের খাবার খোঁজার পথে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও শিকারীরা অবৈধভাবে এসব পরিযান কারী পরিযায়ী পাখিগুলোকে তাদের ব্যবসার জন্য শিকার করছে, যা এই পরিযানকারী পাখিগুলোর জন্য বড় একটি হুমকি।

বিকৃত খাবারের উৎস ও ভ্রমণ পথে প্রতিবন্ধকতা 

পাখিরা যখন খাবার খোঁজে নদী কিংবা জলাশয়ে তখন জলদূষণ ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে তাদের খাদ্যশৃঙ্খলের উপর একটি বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়াও আজকাল কৃষি ক্ষেতে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে যখন পাখিরা তাদের খাবার সংগ্রহ করার জন্য কৃষি ক্ষেত যাচ্ছে তখন এসব রাসায়নিক পদার্থের কারণে তারা মারা যাচ্ছে।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় জাম্বুরা খাওয়া যাবে কি (উপকারিতা ও সতর্কতা)

মানব সৃষ্ট আলো শব্দ দূষণ এবং বিকল্প অভিবাসন পথের অভাব 

অনেক পরিভ্রমণকারী পড়ে যায় পাখিগুলো রাত্রে উড়ে আসে কিন্তু শহরের আলো ও শব্দ দূষণের ফলে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে ফলে তারা অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া পাখি গুলোর বিকল্প কোন ওই ভাষন স্থান না থাকার জন্য তারা তাদের বসতি পরিবর্তন করতে পারছে না যার ফলে তারা ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছে।

পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করার উপায় 

পরিযায়ী অর্থাৎ অতিথি পাখিরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে একটু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু পরিবেশ ধ্বংস, শিকার ও তাদের আবাসস্থল কমে যাওয়ার কারণে দিন দিন তাদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এইসব পরিযায়ী অর্থাৎ অতিথি পাখি রক্ষা করার জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।

পরিযায়ী পাখিদের রক্ষা করার উপায়

  • অবৈধ শিকার ও পাচার বন্ধ করা - পরিযায়ী পাখির বিক্রয় করা অস্বীকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ তাই স্থানীয় প্রশাসনকে এবং বনবিভাগকে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হবে। 
  • পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল সংরক্ষণ - বর্তমানে আমরা বন জঙ্গল হাওর ও জলাভূমি পরিচয় পাখিদের আবাসস্থল হিসেবে অনুপযোগী করে তুলেছি। তাই আমাদের হাওর জলাভূমি ও বনগুলো সংরক্ষণ করতে হবে এবং জলাশয় ও নদী গুলো দূষণমুক্ত করতে হবে। 
  • সচেতনতা বৃদ্ধি ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম - শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিথি পাখি অর্থাৎ পরিযায়ী রাখি রক্ষার প্রয়োজনীয়তা প্রচার করতে হবে। সকল জনগণের মাঝে ও পর্যটকদের মাঝে পাখিদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করার অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়া ও সকল ধরনের প্রচার মাধ্যমে পরিযায়ী পাখি রক্ষার গুরুত্ব প্রচার করতে হবে। 
  • পরিবেশ দূষণ রোধ করা - আজকাল আমরা নদী, হাওর, জলাশয় ইত্যাদিতে প্লাস্টিক ও রাসায়নিক বর্জ্য ফেলে নোংরা করি। এছাড়াও শিল্প কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত না হওয়ার কারণে যে জলাভূমি গুলো দূষিত হয় সেগুলো যাতে দূষিত না হয় সে বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন হতে হবে। অপ্রয়োজনে ভাবে গাছ কাটা রোধ করতে হবে।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে চিনা বাদাম খাওয়ার ১০ উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে বিজ্ঞানীদের চমকপ্রদ গবেষণা

অতিথি অর্থাৎ পরিযায়ী পাখিদের উপর একটি গবেষণা হয়েছে যা আমাদের এ সুন্দর প্রাকৃতিক পৃথিবী ও এসব পাখিদের নিয়ে অমূল্য কিছু ধারণা শিখিয়েছে। এ ধরনের গবেষণা বলে আমাদের পরিবেশের সংরক্ষণ ও পরিবেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার জন্য পথপ্রদর্শক।

পাখিদের নিয়ে গবেষণা করে যা জানা গেছে তা হল পাখিদের উড়ানের নকশা এবং পরিভ্রমণ, পরিযায়ী পাখিগুলোর নিজেদেরকে রক্ষার জন্য শিকার এড়ানোর কৌশল।

পরিযায়ী-পাখিদের-নিয়ে-বিজ্ঞানীদের-চমকপ্রদ-গবেষণা

এছাড়াও আমরা এই গবেষণা থেকে জানতে পারি পাখিদের পরিবেশ পরিবর্তন ও পাখিদের অভিবাসন, পরিযায়ী পাখিদের বংশবিস্তার ও প্রজনন কার্যক্রম এবং সর্বশেষ জানা যায় যে পাখিদের তড়িৎ ভ্রমণের সময় গন্ধ ও শব্দ ব্যবহার করে নিখুঁত পরিভ্রমণ সম্পর্কে।

এসব গবেষণাগুলো আমাদের পরিচয় পাখিগুলোর অভিযাত্রা ও তাদের দৈনন্দিন জীবনে টিকে থাকার কৌশল সম্পর্কে অবহিত করে। এসব গবেষণা থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে তাদের রক্ষার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

শেষ কথাঃ পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা

পরিযায়ী পাখির নামের তালিকা আমরা উপরে জেনেছি। পরিযায়ী বা অতিথি পাখিরা হলো প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। প্রতিবছর এই পরিযায়ী বা অতিথি পাখিগুলো হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কঠিন থেকে কঠিনতম পরিবেশ মোকাবেলা করে তাদের নিজেদের জীবন যাপন করে থাকে।

তাদের এই ভ্রমণের পেছনে থাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ যেমন তাদের খাদ্যের সন্ধানে একটি নিরাপদ আবাসস্থল খোঁজার জন্য। বাংলাদেশের হাওর, নদী নালা বনভূমি এসব অতিথি পাখিদের স্বাগত স্থান হয়ে ওঠে।

কিন্তু বর্তমানে দুঃখজনক হলেও সত্য পরিবেশ দূষণ, বন উজাড় করন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অবৈধভাবে স্বীকার করার ফলে তারা বড় ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ পরিযায়ী অর্থাৎ অতিথি পাখিদের রক্ষা করার জন্য শুধু প্রকৃতিপ্রেমীদের এগিয়ে আসলে চলবে না আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব তাদের রক্ষা করা।

তাদের জন্য নিরাপদ অভয়ারণ্য তৈরি করে লোকজনের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং যারা অবৈধভাবে স্বীকার করে তাদের এই অবৈধ শিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

এছাড়াও আমাদের সকলের উচিত বন রক্ষা করা যাতে এই অতিথি পাখিগুলো আমাদের এই প্রকৃতিকে আরো সৌন্দর্যময় করে তুলতে পারে। সব প্রতিটি পাখিগুলো আমাদের দেশে প্রতিবছর এসে তাদের কলতান, আকাশে উড়াবুড়ি দলবদ্ধ ভাবে এবং তাদের স্নিগ্ধ পদাচারণ পরিবেশকে আরো অপূর্ব সুন্দর করে তোলে।

তাই তাদের টিকে থাকা মানে প্রকৃতির সৌন্দর্য টিকে থাকা। তাই আমরা সকলেই প্রকৃতির এই অপূর্ব সৌন্দর্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাদের নিরাপদ বাসস্থল গড়ে তুলি, যাতে তারা প্রতিবছর আমাদের দেশে এভাবে এসে আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্ঞান পিপাসুর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url